Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মুখোমুখি (নাম তার ভুট্টা রফিক)

মো. রফিকুল ইসলাম। নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি। গ্রাম-শিমুলতলা, ইউনিয়ন- বাঘবেড়। অভাব-অনটনে সংসারের ২৫ বছর বয়সী এক যুবক। সামান্য লেখাপড়া করার পর আর সুযোগ হয়নি অগ্রসর হওয়ার। জীবন যুদ্ধে নামতে হয় এ বয়সেই। চুড়ি, ফিতা, আলতা, সাবান, তেলের গাট্টি কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। অর্থাৎ ফেরিওয়ালা। রফিক ফেরিওয়ালা। কিন্তু মন ভরে না রফিকের। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় সবই তার মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যায়। সবই নীরবে সয়ে যেতে হয়। সংসারের খরচও মিটে না। জমানো টাকা দিয়ে ধানের ব্যবসা করে কিছু লাভ হয়। লাভের টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নিয়ে তাতে ধানের আবাদ করেন। এভাবে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করে কিছু জমি ক্রয় করেন রফিক। পরের বছর নালিতাবাড়ি ব্র্যাক সমিতির সদস্য হন। ভুট্টা চাষ করবেন-এ শর্তে ছয় হাজার টাকা ঋণ নেন। এ অঞ্চলে তখন ধান বা সবজি ছাড়া অন্য কোনো ফসল আবাদের কথা কেউ ভাবতেই পারত না। ব্র্যাক সমিতির দেয়া ৪ কেজি ভুট্টা বীজ দিয়ে ৫০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা আবাদ করেন রফিক। পাশাপাশি ফেরিওয়ালাগিরিও চলে। ৫০-৬০ মণ ভুট্টা হয়। এ ভুট্টার কিছু অংশ বিক্রি করেন,  কিছু খই (পপ কর্ন) বানিয়ে গ্রামেগঞ্জে বিক্রি করেন। বাকিটা খাবারের জন্য রেখে দেন। সব মিলিয়ে সে বছর তিনি ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। এবার তিনি আরও কিছু জমি কিনেন। ভুট্টা চাষে তার এ সফলতার কথা কৃষি বিভাগের নজরে আসে।  

 

১৯৯৭  সনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগে নালিতাবাড়ির ভোগাই নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মিত হয়। এর আওতায় নালিতাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিস রফিকুল ইসলামকে পাঁচ একর জমিতে ভুট্টা ফসলের একটি ব্লক প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করতে দেয়। স্বাভাবিক নিয়মেই প্রদর্শনী প্লট করার জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশকও সে সাথে দেয়া হয়। সুতরাং রফিকুল ইসলামের ভুট্টা আবাদে কোনো আর্থিক সমস্যা হয় না। নতুন কিছু করার তার সেই স্বপ্নটা এবার ডানা মেলতে শুরু করে। পুরোদমে ভুট্টা চাষে মন দেন রফিক। ফলন হয় বাম্পার। প্রায় ৬০০ মণ ভুট্টা ওঠে।

 

রফিক বলেন, ‘আমার ঘরে তো অত জায়গা নাই। এত ভুট্টা কোথায় রাখি? বেচতেও পারছিলাম না। বাধ্য হইয়াই ছোট্ট শোয়ার ঘরটাতেই থামার (জড়ো) করে রাখলাম। সবাই মিলা (মিলে) ভুট্টার ওপরেই বিছানা কইরা রাইত কাটাইতাম। এত ভুট্টা কোথায় কেমনে বেঁচুম (বিক্রি করব), এ চিন্তার কুল পাইতাছিলাম না।’

 

এ অবস্থায় স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় মুরগি ও মাছের খাদ্যের কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিকট ৫০০ মণ ভুট্টা বিক্রি করেন রফিকুল ইসলাম। এ থেকে তার প্রায় এক লাখ টাকা সঞ্চয় হয়। বাকি ভুট্টা হকারের মাধ্যমে শেরপুর, নালিতাবাড়ি, নকলা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। লাভও হয় বেশ। এর পর থেকেই রফিকুল ইসলাম সবার কাছে হয়ে ওঠেন ‘ভুট্টা রফিক’। ফেরিওয়ালার পেশাটা পুরোপুরি ছেড়ে দেন। তিনি বলেন ‘একদিন  জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ভুট্টা বিজ্ঞানী মাহফজুল হক আমার বাড়িতে আসেন। তার কাছ থাইকা ট্রেনিং নেয়ার সময় জানতে পারি, ভুট্টা দিয়া অনেক রকম সুস্বাদু খাবার বানান যায়। তার পরামর্শ নিয়া ঘরে ভুট্টার ছাতু, আটা, রুটিসহ নানান খাবার বানাইয়া নিজেরা খাওয়ার অভ্যাস করি। হেরপর শেরপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় ভুট্টার তৈরি খাবারের দোকান দেই। এতে আমার সুনাম ছড়াইয়া পড়ে। কৃষি বিভাগ থাইকা বিভিন্ন সময় পুরস্কারও পাই।’

 

নালিতাবাড়ি পৌর কাঁচাবাজারে প্রধান রাস্তার ধারেই একটি দোকান ভাড়া নেন ভুট্টা রফিক। এখানেই তিনি শুরু করেন ভুট্টার তৈরি বাহারি খাবার বিক্রি। উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা। পাশাপাশি ভুট্টার তৈরি খাবার সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়া। তিনি সাধারণত যেসব খাবার ভুট্টা দ্বারা তৈরি করেন তা হলো - পেয়াজু, পুরি, গুলগুলি, শিঙ্গারা, ভুট্টা-ঝাল ভাজা, জিলাপি, বুরিন্দা, নিমকি, বালুসা, ছাতু, খই, আটা এসব। রফিকুল ইসলামের দরিদ্রতাকে জয় করতে ফেরিওয়ালা থেকে ধাপে ধাপে শেষ অবধি ভুট্টার তৈরি খাবারের দোকান, যে পেশা তাকে দিয়েছে পারিবারিক সচ্ছলতা, দিয়েছে সামাজিক একটি সম্মানজনক পরিচয়। শুধু তা-ই নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। সুযোগ করে নিয়েছেন কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। আজ কৃষি বিভাগের উপজেলা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান হলে কর্তৃপক্ষ তাকে স্মরণ করে।

 

২০১২ ও ২০১৪ সনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ঢাকর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) বিশ্ব খাদ্য দিবসে অনুষ্ঠিত খাদ্য মেলায় ভুট্টার তৈরি খাদ্যের স্টল দিয়ে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন, সনদপ্রাপ্ত হয়েছেন। নালিতাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শরিফ ইকবাল বলেন, ভুট্টা রফিক তার ভুট্টার তৈরি বাহারি খাবারের জন্য এ এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। আমি নিজেই মাঝে মাঝে তার ভুট্টার তৈরি খাবার কিনে নিয়ে আসি। ভুট্টা চাষি হিসেবে এবং নানা রকম খাবার প্রস্তুতকারক হিসেবে সে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। এ উপজেলাসহ শেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি মেলায় ভুট্টার তৈরি খাবার স্টল স্থাপন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা পেলে সে হয়তো খাদ্য বহুমুখীকরণে মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ভুট্টা ফসল ১.৭৪ লাখ মে. হেক্টর জমিতে ১১.৩৭ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৩.১২ লাখ হেক্টরে ২১.৭৮ লাখ মে. টন এবং ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে তা ৩.৬৪ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন পাওয়া গেছে ২৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি (ডিএই এর তথ্য অনুযায়ী)। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ও ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তার সিংহভাগই ব্যবহার হচ্ছে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য তৈরির কারখানার কাঁচামাল হিসেবে। কিছু অংশ যাচ্ছে বিস্কুট তৈরির কারখানায়। কিন্তু এ ভুট্টা সাধারণের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করি। এতে আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা হলেও এর ঘাটতি পূরণের প্রয়াস পাবে। উপরন্তু এ ফসল আবাদের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। রফিকুল ইসলামকে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় রসদের জোগান দিয়ে পথ বাতলিয়ে দিলে হয়তো তিনি বৃহৎ পরিসরে প্যাকেটজাত খাবার তৈরি করে তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারবেন।

 

কাজী গোলাম মাহবুব*

* সহকারী তথ্য অফিসার (অ.দা.), কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক অফিস, ময়মনসিংহ


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon